১৬ জানুয়ারী ২০২২

ইসলামে ছালাতের বিধান কি? কার উপর ছালাত ফরয?

প্রশ্ন: (১৮৪) ইসলামে ছালাতের বিধান কি? কার উপর ছালাত ফরয?

উত্তর: ছালাত ইসলামের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রুকন; বরং এটা কালেমায়ে শাহাদাতের পর দ্বিতীয় রুকন। এটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা ইসলামের মূল খুঁটি। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ “ইসলামের মূল খুঁটি হচ্ছে, ছালাত।”[1] আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর ছালাত ফরয করেন এমন উঁচু স্থানে যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছা অসম্ভব। কোন মাধ্যম ছাড়াই রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ একটি রাত মে’রাজের রাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে সপ্তাকাশের উপর আরশে নিয়ে এই ছালাত ফরয করেন। প্রথমে রাত-দিনে ছালাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা বান্দাদের প্রতি দয়া করে এর সংখ্যা কমিয়ে নির্ধারণ করেন পাঁচ ওয়াক্ত। আর প্রতিদান ঘোষণা করেন পঞ্চাশ ওয়াক্তের বরাবর। এ থেকে প্রমাণিত হয় ছালাত কত গুরুত্বপূর্ণ। ছালাতকে আল্লাহ্ কত ভালাবসেন। সুতরাং মানুষের জীবনের সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ সময় এই ক্ষেত্রে ব্যয় করা অত্যন্ত জরুরী। ছালাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে দলীল হচ্ছে: কুরআন, সুন্নাহ্ ও মুসলমানদের এজমা বা ঐকমত্য। 


কুরআন থেকে দলীলঃ 


আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

 ]فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلاةَ إِنَّ الصَّلاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا[ 


অর্থঃ “যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন নামায প্রতিষ্ঠা কর; নিশ্চয় নামায মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা: ১০৩) 


নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু‘আয বিন জাবাল (রা:)কে ইয়ামান প্রেরণ করেন, তখন তাকে বলেনঃ


 أَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ 


“তুমি তাদেরকে শিক্ষা দিবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রতিদিন (দিনে-রাতে) তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন।”[2] 


ছালাত ফরয হওয়ার উপর সমস্ত মুসলমান ঐকমত্য হয়েছে। এ জন্য উলামাগণ (রহ:) বলেন, কোন মানুষ যদি পাঁচ ওয়াক্ত বা কোন এক ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে, তবে সে কাফের মুরতাদ ইসলাম থেকে বহিস্কৃত। তার রক্ত ও সম্পদ হালাল। কিন্তু যদি সে তওবা করে তার কথা ভিন্ন। অবশ্য উক্ত ব্যক্তি যদি নতুন মুসলমান হয়- ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে এবং অনুরূপ কথা বলে তবে তার ওযর গ্রহণযোগ্য হবে। তাকে উক্ত বিষয়ে জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে। তারপরও যদি সে ছালাত ফরয হওয়ার বিষয়টিকে অমান্য করে তবে সেও কাফের বলে গণ্য হবে। 


নিম্নলিখিত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ছালাত ফরযঃ 

মুসলিম, বালেগ, আকেল, নারী বা পুরুষ। 


মুসলিমের বিপরীত হচ্ছে কাফের। কাফেরের উপর ছালাত ফরয নয়। অর্থাৎ- কাফের অবস্থায় তার জন্য ছালাত আদায় করা আবশ্যক নয়। ইসলাম গ্রহণ করলেও আগের ছালাত ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কিন্তু এ কারণে ক্বিয়ামত দিবসে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ্ বলেন,


 ]إِلَّا أَصْحَابَ الْيَمِينِ، فِي جَنَّاتٍ يَتَسَاءَلُونَ، عَنْ الْمُجْرِمِينَ، مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ، قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ، وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ.[ 


“কিন্তু ডানদিকস্তরা, তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। বলবে, তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করেছে? তারা বলবে, আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। আর আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।” (সূরা মুদ্দাস্সির- ৩৯-৪৬) ‘আমরা নামায পড়তাম না’ কথা থেকে বুঝা যায়, তারা কাফের ও ক্বিয়ামত দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা সত্বেও ছালাত পরিত্যাগ করার কারণে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। 


প্রাপ্ত বয়স্কঃ যার মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কোন একটি চিহ্ন প্রকাশ পাবে তাকেই বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক বলা হবে। উক্ত চিহ্ন পুরুষের ক্ষেত্রে তিনটি আর নারীর ক্ষেত্রে চারটি। 


 ক) পনর বছর পূর্ণ হওয়া। 

 খ) উত্তেজনার সাথে নিদ্রা বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত হওয়া। 

 গ) নাভীমূল গজানো। অর্থাৎ- লজ্জাস্থানের আশে-পাশে শক্ত লোম দেখা দেয়া। এ তিনটি চিহ্ন নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রে প্রজোয্য। নারীর ক্ষেত্রে চতুর্থ চিহ্নটি হচ্ছে, হায়েয বা ঋতুস্রাব হওয়া। কেননা তা বালেগ হওয়ার আলামত। 


আকেল বা বুদ্ধিমান হচ্ছে বিবেকহীন পাগলের বিপরীত শব্দ। কোন নারী বা পুরুষ যদি অতি বয়স্ক হওয়ার কারণে হিতাহীত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তবে সেও এ শ্রেণীর অন্তর্গত হবে। এ অবস্থায় বিবেকহীন হওয়ার কারণে তার উপর ছালাত ফরয হবে না। 


ঋতুস্রাব বা নেফাস হলে ছালাত ওয়াজিব নয়। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ “নারী কি এমন নয় যে, সে ঋতুবতী হলে নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না?”[3] 




[1] তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ নামাযের সম্মান, ইবনু মাজাহ, অধ্যায়ঃ ফিতনা, অনুচ্ছেদঃ ফিতনার সময় যবান বন্ধ রাখা। ইমাম তিরমি্যী বলেন হাদীছটি ছহীহ হাঁসান। 

[2] বুখারী, কিতাবু যাকাত, হা/১৩৯৫। মুসলিম, কিতাবুল ঈমান। 

[3] ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর রোযা পরিত্যাগ করা। হা/৩০৪। 


https://play.google.com/store/apps/details?id=secondpoject.com.shhridoy.navigation


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: